সন্তানের প্রতি হযরত লুকমানের অমূল্য উপদেশ
১. দুনিয়া একটি গভীর সমুদ্রের মতো; যাতে বহু লোক ডুবে আছে। তুমি দুনিয়ার ঐ সমুদ্রে তাকওয়াকে কিস্তি বানাবে, যাতে ঈমান বোঝাই থাকবে; যার পাল হবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল। তাহলে হতে পারে তুমি ডুবে যাওয়া থেকে বেঁচে যাবে; অন্যথায় তুমিও রেহাই পাবে না।
২. যার নফস তার নিজের জন্য উপদেশকারী হবে সে আল্লাহর হেফাজতে থাকবে। যে নিজে মানুষের মাঝে ইনসাফ করে আল্লাহ তার ইজ্জত বৃদ্ধি করেন। আল্লাহর আনুগত্য করতে গিয়ে যে পরিমাণ অপদস্ত হয় আল্লাহ তার সেই পরিমাণ ইজ্জত বাড়িয়ে দেন।
৩. সন্তানকে আদব-আখলাক শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রহার করা এমন জরুরি যেমন জমির জন্য পনি।
৪. বৎস! ঋণ করা থেকে বিরত থাকো; কারণ ঋণ দিনে আনে অপমান রাতে আনে পেরেশান।
৫. বৎস! আল্লাহর ওপর এতো বেশি আশা রাখো যাতে নাফরমানির কারণে ধরা না খাও। আর তাঁকে এতো বেশি ভয় করো যাতে রহমত থেকে নিরাশ না করে।
৬. যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে তার চেহারা থেকে সৌন্দর্য চলে যায়। যার চরিত্র নষ্ট হয়ে যায় তার পেরেশানি বেড়ে যায় এবং বিরাট পাথর সরানো অনেক সহজ অবুঝকে বুঝানোর চেয়ে।
৭. বৎস! আমি বড় পাথর, লোহা এবং অসম্ভব ভারি জিনিসের বোঝা বহন করেছি কিন্তু আমার কাছে মন্দ প্রতিবেশীর চেয়ে ভারি বোঝা কিছুই মনে হয়নি। আমি তিক্ততার চেয়ে অধিক তিক্ত বস্তুর স্বাদ আস্বাদন করেছি কিন্তু মুখাপেক্ষিতার চেয়ে অধিক তিক্ত কোনো বস্তু দেখি নি। বৎস! মূর্খকে প্রতিনিধি বানিয়ো না; যদি জ্ঞানী না পাও নিজেই নিজের প্রতিনিধি হও। বৎস! মিথ্যা কথা থেকে বেচে থেকো; কেননা মিথ্যা পাখির গোশতের মতো সুস্বাদু। জানাযায় বেশি বেশি যেও আর বিবাহ অনুষ্ঠানে যেও না; কেননা জানাযা তোমাকে আখেরাতের স্মরণ করাবে আর বিবাহ দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ করবে। বৎস! এতো মিঠাও হবে না যে গিলে ফেলবে এবং এতো তিতাও হইও না যে ফেলে দিবে।
৮. তোমার খানা পরহেজগার লোক খাবে এবং নিজের বিষয়ে ওলামাদের পরামর্শ নিবে।
৯. বৎস! যদি তুমি কাউকে ভাই বানাতে চাও তার পূর্বে তাকে রাগান্বিত করো। যদি রাগ অবস্থায় তোমার সাথে ইনসাফের আচোরণ করে তাহলে তাকে ভাই বানাও অন্যথায় তার থেকে বাচো।
১০. তোমার কথা যদি মিষ্টি হয় চেহারা যদি হাস্যোজ্জ্বল হয় তুমি দানকারীর চেয়েও প্রিয় হবে ।
১১. বৎস! তোমার বন্ধুদের নিকট নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করো যে তোমার কোনো প্রয়োজন নেই তাদের প্রতি; কিন্তু তাদের প্রয়োজন রয়েছে তোমার প্রতি। ঐ ব্যক্তির মতো হও যে মানুষের কাছে প্রশংসাও চায় না এবং নিন্দাও না; এ অবস্থায় সে নিজে কষ্ট পেলেও মানুষ তার থেকে শান্তি পাবে।
...
মৃত্যুর পূর্বে ছেলেকে ছয়টি উপদেশ
ফকিহ আবুল লায়ছ সমরকন্দি রহ. বলেন, মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় হযরত লুকমান তাঁর ছেলেকে বলেন, জীবনে তোমাকে অনেক উপদেশ দিয়েছি, এবার আমার দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার পালা। চির বিদায়ের পূর্বে তোমাকে কয়েকটি উপদেশ দিয়ে যাচ্ছি :
০১. দুনিয়ার কাজে এতটুকু ব্যস্ত থাকো, যতটুকু পরিমাণ সময় দুনিয়ায় অবশিষ্ট রয়েছে। তার মানে হল, দুনিয়া থেকে বিদায়ের সময় চলে এসেছে, তাই দুনিয়ার কাজ কম করো।
০২. আল্লাহ তাআলার কাছে তোমার যতটুকু প্রয়োজন রয়েছে তোমার, ততটুকুই তাঁর ইবাদত করো। তার মানে হল, তুমি তো সবকাজে সবসময় মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী, তাই নিয়মিত তাঁর ইবাদত করো।
০৩. আখেরাতের জন্য তেমন প্রস্তুতি গ্রহণ করো, যতটুকু সময় সেখানে থাকতে হবে। তার মানে হল, আখেরাতে তো চিরদিন থাকতে হবে। তাই ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করো।
০৪. যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা না পাবে, ততক্ষণ জাহান্নাম থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে যাবে।
০৫. গুনাহ করতে মন চাইলে যতক্ষণ জাহান্নামের শাস্তি সহ্য করতে পারবে বলে মনে হয়, ততক্ষণ গুনাহ করো।
০৬. কখনো গুনাহ করতে মন চাইলে এমন জায়গা তালাশ করো যেখানে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর ফেরেশতারা দেখতে পাবে না।
...
এত জ্ঞানী কীভাবে হলেন?
একদিন এক মজলিসে হযরত লুকমান মানুষকে হেকমত ও জ্ঞানের কথা শুনাচ্ছিলেন। তখন একব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি ওইলোক না, যে আমার বকরি চরাতে? হযরত লুকমান বললেন, জি, আমিই সেই লোক। লোকটি আবার প্রশ্ন করল, তুমি কীভাবে এমন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হলে? তিনি উত্তর দিলেন, আমি দুটি কাজ করি নিয়মিত। ক. নিয়মিত সত্য কথা বলি। খ. অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকি।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হযরত লুকমান ওই ব্যক্তিকে বললেন, কয়েকটি কাজ করার কারণে আল্লাহ তাআলা আমাকে এই মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন, তুমিও কাজগুলো করলে এমন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পারবে। কাজগুলো হল :
০১. নিজের দৃষ্টি অবনত রাখা
০২. জবান নিয়ন্ত্রণ রাখা
০৩. হালাল রিজিকে সন্তুষ্ট থাকা
০৪. নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করা
০৫. সর্বদায় সত্য বলা, সত্য কথায় অবিচল থাকা
০৬. ওয়াদা ও অঙ্গীকার পূর্ণ করা
০৭. মেহমানের সম্মান করা
০৮. প্রতিবেশীকে সুরক্ষা দেওয়া
০৯. অনর্থক কাজ ও কথা পরিহার করা
Comments
Post a Comment
আপনার ইতিবাচক মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।