দিন পর্যন্ত কাজী ইব্রাহিমের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন
বাংলাদেশের রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং ৪২০, ৪০৬, ৩৮৫ ও ৫০৬ ধারায় চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতারণার অভিযোগে মুফতি কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলায় মুফতি কাজী ইব্রাহিমের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পরিদর্শক মো. হাসানুজ্জামান এই রিমান্ডের আবেদন জারি করেন।
ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম গুলোতে ব্যাবহার করে নানান বক্তব্য দিয়ে আলোচিত মুফতি কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে ডিএমপি’র গোয়েন্দা সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বাদী হয়ে গতকাল সকালে মোহাম্মদপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে জেডএম রানা নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় ৪২০, ৪০৬ ও ৩৮৫, ৫০৬ ধারায় চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতারণার অভিযোগে মুফতি কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম মামলা করেন।
সূত্র মতে জানা যায়, রিমান্ড আবেদনের শুনানির সময় আদালতে এক পর্যায়ে আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন মুফতি কাজী ইব্রাহিম। মুফতি ইব্রাহিমকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, রিমান্ড মানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করবে। যা জিজ্ঞাসাবাদ করে ঠিকমতো তার উত্তর দিতে হবে। রিমান্ড মানে মারধর করবে বা অন্য কিছু করবে এমন না। এ কথা আদালত বলেন।
এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে যে। রিমান্ড মানে ভয়ভীতির কোনো কিছু নয়। আদালতের এমন কথার জবাবে মুফতি ইব্রাহিম আদালতকে একটি হাত উঁচিয়ে দেখান এবং বলেন- তার এই হাতে ব্যথা। কারণ রিমান্ডের আগেই তিনি তাদের মার খেয়েছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট পবিত্র কোরআনের সূরা ইউসুফের সঙ্গে মিলে যায় তার এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা চান বিচারক। জবাবে মুফতি ইব্রাহিম আদালতকে জানান, তৎকালীন মিশর সরকার নিজেই হযরত ইউসুফ (আ:)কে শাসকের দায়িত্ব দেন। আমার থিম ও স্বপ্ন হলো- বাংলাদেশের সরকারও এক সময় এমন কোনো একজন যোগ্য আলেম লোককে দায়িত্ব দেবেন। শাসক ও আলেম মিলে দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবেন। বাংলা মা’কে একবার উদ্ধার করেছিলাম ৩০ লাখ সন্তানের জীবনের বিনিময়ে। সেই বাংলা মা’কে আবার নতুন শত্রু গ্রাস করেছে। সেখান থেকে বাংলা মা’কে মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার এবং শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো উস্কানিমূলক বক্তব্য দেইনি। বরং তাদের পক্ষেই কথা বলেছি। বঙ্গবন্ধু এ দেশকে ভালোবেসে ছিলেন। বিনিময়ে তার বুক ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার এজাহারে মুফতি কাজী ইব্রাহিমের কিছু বক্তব্য উল্লেখ করা হয়, তার একটি এমন ‘বিগত দুই সপ্তাহ ধরে দেশের সরকার এবং জনগণের কল্যাণে এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য অকুতোভয় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দু’টি খুতবা দিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুস্তানি রাজাকার আরএসএস গুণ্ডা ‘র’ এর গুণ্ডারা আমার বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে আমার লালমাটিয়ার বাসায় হানা দিচ্ছে। স্কুলের পাশে জাকির হোসেন রোডের ডাস্টবিনের পাশের ১০ তলা ভবনে আমি আছি। এই মুহূর্তে তারা আমাকে গুম করার জন্য এখানে এসেছে। আপনারা আসুন, দেখুন, এই অন্তরে আমেরিকার ইউরোস্টোন আগ্নেয়গিরির মতো অগ্ন্যুৎপাত লুকিয়ে রেখেছি। এইবার, এই বাংলাকে, স্বাধীন বাংলাকে, এই ‘র’ এবং হিন্দুস্তানি রাজাকারদের কালো হাত থেকে মুক্ত করে ছাড়াবো, ইনশাআল্লাহ্’
এছাড়া গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদে অন্য একটি ভিডিওর বক্তব্যের বিষয় উল্লেখ করা হয়, এতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি কোরআন শরীফে আছে। ২০২১ সাল থেকে সামনের দিকের রাজনীতি কোরআনে আছে। আগেও ছিল বলিনি। এটা আছে। আমি পাঁচ বছর অপেক্ষা করছি। কিছুতেই আজকে এই খুতবা দিতাম না। যদি না আমার স্বপ্ন সত্য, স্বপ্ন আমাকে পারমিশন না দিত। এখন বলবো সময় হয়েছে। সেই ইনফরমেশন পেয়েছি। তারপর বলেছি যে, বাংলাদেশের রাজনীতি সূরা ইউসুফে আছে। এই বাংলাদেশসহ আগামী দিনের রাজনীতি স্বপ্ন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হবে। আমরা আগামীকাল কি কি হবে তা স্বপ্ন দিয়ে দেখতে পাচ্ছি।
অন্য একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট সাহেব বললেন, নারীরা পুরুষের মতো দাড়ি ও গোঁফওয়ালা হয়ে যাচ্ছে। আবার পুরুষরা নারীর কণ্ঠে নারীর মতো হয়ে যাচ্ছে। জেন্ডার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন যিনি দিয়েছেন তিনি অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। ভারতের ভ্যাকসিন যিনি প্রথম দিয়েছেন তিনি অসুস্থ। আরেক দেশের ভ্যাকসিন যাকে দিয়েছে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইত্যাদি মিথ্যা ভীতি প্রদর্শন করে সরকারের গৃহীত করোনা টিকাদান কর্মসূচিকে ব্যাহত করেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া, করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য পবিত্র কোরআনের রেফারেন্স দিয়ে একটি সূত্র বলে কোরআন শরীফের আয়াতের কল্পনাপ্রসূত মনগড়া ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এছাড়াও, ইতালি প্রবাসী জনৈক মামুন মারুফের স্বপ্নে দেখা করোনাভাইরাসের সঙ্গে কথোপকথনের ইন্টারভিউ কল্পিতভাবে মিথ্যা তথ্যসহ বর্ণনা করার বিষয়টিও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ মানবজমিনকে বলেন, মুফতি কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে প্রথমে প্রতারণা এবং পরবর্তীতে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ইব্রাহিমকে বিস্তারিত জানতে গোয়েন্দা হেফাজতে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
Comments
Post a Comment
আপনার ইতিবাচক মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।